২০২৪‑এর “জুলাই গণঅভ্যুত্থান”‑এ ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, রাজনৈতিক মতাদর্শ অতিক্রম করে যে অভূতপূর্ব সংহতি জন্ম‑নিয়েছিলো,—মাঠে‑ঘাটে, শহরে‑গ্রামে, কর্মক্ষেত্রে‑ক্যাম্পাসে—তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অদ্বিতীয়, আর উপমহাদেশেও রীতিমতো দুর্লভ। নিরস্ত্র ছাত্র‑জনতা যখন তাদের ভয়, বিভেদ এবং রাষ্ট্রীয় দমন‑পীড়নকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসে, তখনই ইতিহাস মোড় নেয়। গুম‑খুন‑নির্যাতনে কুখ্যাত, রক্তপিপাসু মাফিয়া‑শাসনে পরিণত আওয়ামী লীগ সরকারও শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এ বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছিলো কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার নির্মম দমন; তবে জনগণের ক্ষোভের উৎস কেবলমাত্র ২০২৪‑এর জুলাই নয়, তার অনেক আগে থেকে সঞ্চিত।
স্বাধীনতার পর খণ্ডিত কিছু সময়কাল বাদ দিলে, বেশির ভাগ সময়ই রাষ্ট্র-যন্ত্র ও বড় রাজনৈতিক দলসমূহ সাধারণ মানুষকে হতাশ ও বঞ্চিত করেছে। বিশেষত ২০০৮‑এর বিতর্কিত ‘ল্যান্ড-স্লাইড’ বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নতুন প্রজন্ম চোখের সামনে দেখেছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, হাস্যকর ডামি নির্বাচন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক উন্মাতাল অধ্যায়—যার মাধ্যমে ফাটল ধরেছিলো বহু আগে, কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটে ২০২৪‑এর উত্তপ্ত জুলাইয়ে।
Odhikar-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯–২০২৩ সালের মধ্যে ২,৬৯৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, ৬৭৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, ১,০৪৮ জন মানুষ তথাকথিত “পুলিশি হেফাজতে” মৃত্যুবরণ করেছেন। [১]
ইন্টেরিম সরকারের তদন্ত কমিটির তথ্য অনুসারে ২০০৯‑২০২৩ সালের আওয়ামী লীগ শাসনের সময়ে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন টাকা পাচার হয় এবং মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৮ ট্রিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়। [২]
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।
সরকারি অভিযানে বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করার পর আনুমানিক ২ হাজারের অধিক সন্দেহভাজন গ্রেফতার ও ন্যায়বিচারবিহীন পদ্ধতিতে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছিলো, যা মানবাধিকার সংস্থা Human Rights Watch ন্যায়বিচারের প্রতি অবিচার করে উল্লেখ করে। [৩]
জনমনে এই ঘটনা নিয়ে এখনো নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। প্রশ্ন ওঠে মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে পিলখানার ঘটনা সেনাবাহিনীকে দুর্বল ও অনুগত করার ষড়যন্ত্র ছিলো কি না।
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরের হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে "অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট" শীর্ষক নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান পরিচালিত হয়, যেখানে পুলিশ ও র্যাব অবাধে গুলি চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচার হত্যায় মেতে ওঠে। স্বাধীন মিডিয়া তদন্ত ও মানবাধিকার সংস্থা অধিকার তথ্য অনুসারে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অন্তত ৬১ জন নিহত হয়; হেফাজতের তালিকায় ৯৩ জন নিহত দাবি করা হয়েছে। [৪]
স্বাধীনতা উত্তর ৫৩ বছরের হতাশা ও প্রধাণত ১৬ বছরের আওয়ামীলিগের দুঃশাসন, দুর্নীতি, হত্যা, গুম, গণহত্যা, অর্থপাচার, ডামি নির্বাচন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন-ই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্তর্নিহিত প্রেরণা।
গণঅভ্যুত্থানের যে সাফল্য সেটা একদিনে আসেনি। ১৬ বছরের আওয়ামীলিগের দুঃশাসনের সময় বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে।
বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে এই প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা তাৎপর্যপূর্ণ সফলতা অর্জন করে। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডী ছাড়িয়ে কিভাবে একত্রে যুগপৎ আন্দোলন করতে তার প্রথম শিক্ষা তারা পায়। এ সময়েই গঠিত হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি করা PUSAB (Private University Students Alliance of Bangladesh)। শুধু ১৫ এর ভ্যাট আন্দোলন নয়, PUSAB এর নেতৃত্বে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ২০১৮ ও ২০২৪ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই: ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডে দুই স্কুলছাত্র (রাজিব ও মীম) নিহত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এই প্রথম সারাদেশে বিশ্ববিদ্যলয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষর্থীরাও দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। ২০১৮’র আন্দোলন শিক্ষার্থীদের সংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী হতে শেখায়—ট্রাফিক পরিচালনা, গণজমায়েত, ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ—এসব কৌশল পরবর্তীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে কাজে এসেছে।
২০১৮তে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিলো কোটা বিরোধী আন্দোলন। এটা নিয়ে আমরা সামনে আলোচনা করবো। ২০১৯ সালের আবরার ফাহাদের মর্মান্তিক হত্যাও ছাত্র-জনতার মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।
এছাড়াও ১৩-এর শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষব, জঙ্গী নাটক ইত্যাদি নিয়ে বাংলাদেশের মাদ্রাসার ছাত্ররাও নির্যাতিত, বিক্ষুব্ধ ও বিভিন্ন সময়ে রাজপথে সক্রিয় ছিলো। যারা ২০২৪ এর জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে বড় ভূমিকা রাখে।
জুলাইকে বুঝতে হলে স্বাধীনতা পরবর্তী হতাশা ও আওয়ামীলিগের মাফিয়া শাসন যেমন বুঝতে হবে, তেমনি বুঝতে হবে কেন কোটা এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসাবে কাজ করলো।
দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি এবং বেসরকারি ১১৬টি, যার মধ্যে ১০৭টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। অথচ এই বিশাল উচ্চশিক্ষা কাঠামো সমাজকে যে মৌলিক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও মানবিক নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিলো, তা আজ একটি চাকরিপ্রার্থী—হতাশ, দিশাহারা প্রজন্মে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩ থেকে জানা যায়, ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৩ লাখই বেকার। আর এই বেকারদের ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত বেকার। আর ২১ শতাংশ বেকার, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও তারা কোনো কাজে ঢুকতে পারছে না।
এই হতাশার মাঝে কোটা প্রথা যেন এক চরম বৈষম্যের নাম। যেখানে ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য বরাব্দ। যেন তারাই পুরো বাংলাদেশ, বাকিরা অচ্ছুৎ, বাংলাদেশের বাহিরের কেউ।
আরো ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে বর্তমানে দেশের সনদধারী মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে অন্তত ৯০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ভুয়া। [৫]
কোটার ইতিহাস দীর্ঘ। ব্রিটিশদের সময় আইসিএস (ইম্পিরিয়াল সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় একচেটিয়াভাবে ছিলো ইওরোপীয়দের আধিপত্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে সংসদীয় সংশোধনের মাধ্যমে ভারতীয়দের জন্য ৪০% কোটা বরাদ্দ হয়। ৪০% ইওরোপীয়, ৪০% ভারতীয়, ২০% প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিসে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের জন্য নির্ধারিত হলো। বলা হয়, ১৯৪৭-এর দেশভাগের পরেও কোটাব্যবস্থা বহাল থাকে। সেসময় সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তান) পরীক্ষায় পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ৮০% এবং বাকী ২০% নিয়োগ হত মেধার ভিত্তিতে। [৬]
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরেও একই অবস্থা বহাল তবিয়তে থাকে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে ৮০% ছিলো কোটার ভিত্তিতে, বাকী ২০% মেধার ভিত্তিতে। ৮০%-এর ৩০% মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততির জন্য, ৪০% পশ্চাৎপদ জেলার অধিবাসীদের জন্য, ১০% মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য। [৭] সেসময়কার যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় এই সিদ্ধান্তের কিছুটা যৌক্তিকতা ছিলো হয়তবা। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নেওয়া সিদ্ধান্তকে প্রস্তরলিখিত অমোঘ আইন বলে মেনে নেওয়া হলে যেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তাই হয়েছিলো পরবর্তী বাংলাদেশে। মেধার চাইতে কোটা প্রাধান্য পেতে থাকলো। জনমনে রোষের বীজ বপন হতে আরম্ভ করলো।
বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় মেধার চাইতে কোটার মাধ্যমে বেশি নিয়োগ হচ্ছিলো। ২০১৩ সালের জুলাইতে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু হয় কোটানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন। সেসময় কোটার বণ্টন ছিলোঃ ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ পশ্চাৎপদ মানুষদের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য এবং এক শতাংশ ছিলো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য।[৮]
পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনে যোগ দেয়। এভাবে দেশব্যাপী আন্দোলনটি ভালোরকম সাড়া ফেলে। ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বভাব সর্বদা একই থাকে। তারা বিরোধী কণ্ঠকে রীতিমত যমের মত ভয় পায়। নিজের মতের একটু উনিশ বিশ মত দেখলেই দৌড়ে আসে গলারুদ্ধ করতে। সেবারও তাই হলো। ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করা হলো। আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ নির্লজ্জভাবে হামলে পড়লো তাদের ওপর। এই আন্দোলনের জেরে ১৩ জুলাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) জানায় যে ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিলো যে ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফলে কোটা নীতি প্রয়োগ করা হবে না। তবে পরবর্তী পর্যায়ে কোটা প্রযোজ্য থাকবে।
২১ মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেয় যে, কোটাব্যবস্থা বহাল থাকবে। শিক্ষার্থীরা ৮ই এপ্রিল এই ঘোষণার বিপক্ষে শাহবাগ থেকে আন্দোলন শুরু করে। দাবী ছিলো কোটা ১০%-এ নামিয়ে আনা হোক। আবারও ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনীর সামনে সুযোগ আসলো নিজেদের লাঠির জোর প্রদর্শনের। এবারও তারা লজ্জা আর গণতান্ত্রিক বিবেক পকেটে ভরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে বসে। ১৬০ জনেরও বেশি আহত হয়।
আক্রমণ করে তো মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখা যায় না (কখনও যায়ওনি)। আন্দোলন দমে যাওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি বেগবান হলো। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়লো এর উত্তাপ। দিনকে দিন উত্তাপ বাড়তে লাগলো। ১১ই এপ্রিল জাতির জনক-কন্যা রাগ করে একটা সংবাদ সম্মেলনে বলে,
“যাও কোনো কোটা থাকবে না।”[৯]
অনেকে ভাবলো এত ত্যাগ-তিতিক্ষা মনে হয় সফল হলো। তবে কেউ কেউ সন্দেহ মনে জিইয়ে রাখে। ২রা মে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন।[১০] এবার সেসব সন্দেহবাতিক মনগুলো কিছুটা স্বস্তি পেলো।
৩০শে জুন। প্রায় দুই মাস হয়ে গেলেও কোটা বাতিলের কোনো বাস্তব প্রয়োগ দেখতে না পেয়ে ছাত্ররা আবারও ফুঁসে ওঠে। শুরু হয় দ্বিতীয় দফার আন্দোলন। পেটোয়া বাহিনীর উন্মত্ততা বেড়ে গেলো কয়েকগুণে। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে।[১১] ১২ জুলাই মানবতার জননী জাতির জনক-কন্যা বলে—উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে কোটা সংস্কার করা অসম্ভব।
১৭ই জুলাইয়ে মানবতার দরদী শেখ হাসিনা বলে ১১ই এপ্রিলে তার দেওয়া কোটা বাতিলের ঘোষণা তৎকালীন উগ্রবাদীদের! অরাজকতা সৃষ্টিকালীন অবস্থা মোকাবেলা করতে দেওয়া হয়েছিলো (অনেকটা বাচ্চাদেরকে খেলনার লোভ দেখিয়ে না দেওয়ার মত!)। ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়। পেটোয়া বাহিনীরও শক্তি প্রদর্শনের খেলা চলছিলো পাল্লা দিয়ে, একেবারে বিরামহীন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। [১২]
৩০ জুলাই ২০১৯ তারিখে সরকার জানায়, বর্তমানে ১ম এবং ২য় শ্রেণীর পদে (নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড) নিয়োগে কোনো কোটা নেই, তবে ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর পদে (চতুর্দশ থেকে বিংশ গ্রেড) কোটা এখনও কার্যকর আছে, কিন্তু যদি সংশ্লিষ্ট কোটার কোনো প্রার্থী পাওয়া না যায়, তবে এটি সাধারণ প্রার্থীদের মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।[১৩] বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৮ থেকে জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত ১৬ জনেরও বেশি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আন্দোলনের সূচনা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন ও সারাদেশে ছাত্রসমাজের জোটবদ্ধ আন্দোলন (৫ জুন- ১ জুলাই)
জুন ৫ কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আবেদনের কারণে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় জারী করা কোটা বাতিল-প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে পূর্বোক্ত কোটাকে পুনর্বহাল করে।[১৪] এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে প্রতিবাদ জানায়। সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে পূর্বোক্ত কোটা পুনর্বহালের জন্য আবেদন করে।
জুন ৬ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে। দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো হয়। তবে ঈদুল আযহার ছুটির কারণে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে যায়।
জুলাই ১ তারিখে ২৪ দিন বিরতির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার দাবীতে রাস্তায় নামে। প্রতিবাদ জানায়। জুলাই ৪-এর আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় জানানোর জন্য। গঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। [১৫]
এই সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ‘বাবস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ৫ জুন ছাত্র শক্তির মেসেঞ্জার গ্রুপে কোটা পুর্নবহাল করে হাইকোর্টের রায়ের ব্যাপারে আলোচনার পর মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত হয়। তখন নাহিদ ইসলাম , আসিফ মাহমুদ, আব্দুল হান্নান মাসউদ, রিফাদ রশিদ, হাসিব আল ইসলামসহ আরো শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয় যার মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
আন্দোলনের নেতারা সিদ্ধন্ত গ্রহণ করেন সাধারণত শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলনকে পরিচালনা করার। যাতে আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলন বা শিবির ট্যাগ না দেওয়া যায়। তিনি আরো জানান ১৮ সালের কোটা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা শিখেছিলেন যে একক নেতৃত্ব থাকলে তাকে নানানভাবে ম্যানিপুলেট করা, আর্থিক প্রলোভন দেখানো কিংবা ভয় দেখিয়ে আন্দোলন দমন করার সম্ভাবনা থাকে। তাই তারা ধীরে ধীরে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশাল একটি নেটওয়ার্ক গঠন করেন। যেখানে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা সবাই সমান পদমর্যাদা ‘সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক’। [১৬]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় পাঠাগার থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এই রাস্তাটি প্রায় দেড় ঘণ্টার মত অবরোধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
হাইকোর্ট কোটা সংস্কারকে নাকচ করে দিয়ে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয় যে, ৫৬% কোটা পুনর্বহাল করা হবে। [১৭]
আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে ছাত্ররা এদিনের প্রতিবাদ মিছিল থেকে জুলাই ৬-তে “বাংলা ব্লকেড” কর্মসূচীর ডাক দেয়।[১৮] জুলাই ৭-এ সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বয়কট করার আহ্বান জানায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহবাগ, বাংলামটর, সাইন্সল্যাব, মিন্টু রোডসহ ঢাকা নগরীর প্রধান স্থানসমূহের সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। দিনব্যাপী কর্মসূচী শেষে ছাত্ররা দাবী তোলে এই অযৌক্তিক কোটাব্যবস্থাকে বাতিল করে আইন প্রনয়ণের জন্য।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে ঢাকা শহর স্থবির হয়ে যায়। এদিন ছয়টিরও বেশি ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এ দিনই ‘একদফা’ কর্মসূচীর মাধ্যমে ঘোষণা দেয় যে, কোটাব্যবস্থা পরিপূর্ণ বাতিল না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থামাবে না। এ বিক্ষোভকে 'অযৌক্তিক' উল্লেখ করে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা নগরীর ১১টি প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ঢাকাবাসী ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াতে মারাত্মক অসুবিধা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের প্রধান সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। দুজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে করে।
আন্দোলনের উত্তালাবস্থা প্রত্যক্ষণ করে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য কোটা পুনর্বহাল ঘোষণাকে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।[১৯] এই রায় সত্ত্বেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবী করে এই পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধানের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন খুলতে হবে এবং প্রতিশ্রুতি দিতে হবে কোটা সংস্কার করা হবে, অন্যথায় তারা আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব বলে ছাত্ররা যেন আন্দোলন বাদ দিয়ে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়, কেননা তাদের আন্দোলন স্বাভাবিক জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। “এই কোটা আন্দোলনকে সরকার-বিরোধী আন্দোলন হিসেবে ব্যবহার করা হলে সরকার তা কঠোরহস্তে দমন করবে”।[২০] স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে আন্দোলনকারীরা “সীমা অতিক্রম করছে এবার!”। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে।
ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে এবং কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। ছাত্রলীগ তাদের ওপরও হামলা করে। ভিডিও ফুটেজধারণকারী এক ছাত্রকে হলে নিয়ে পেটায় তারা।
সাপ্তাহিক ছুটি থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভ কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শহরের একটি রেলওয়ে অবরোধ করে। একটি প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনরত ছাত্রদের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় মামলা দিয়ে এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জুলাইয়ের বড় একটা অংশ জুড়ে সোশাল মিডিয়া। যখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়া হয় সরকারের পদলেহনে ব্যস্ত অথবা কন্ঠরুদ্ধ —মামলা, হামলা, গুম, খুনের প্রকোপে। এর মাঝে সোশাল মিডিয়া জুড়ে সরকার-বিরোধী ন্যারেটিভ, সত্য পৌঁছে দেওয়া ও সাধারণত মানুষকে উজ্জীবিত রেখেছিলো অনলাইন এক্টিভিস্টরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হচ্ছে পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন, জুলকারনাইন সায়ের, তাসনিম খলিল, ফাহাম আব্দুস সালাম, খালেদ মুহিউদ্দীন, শায়খ আহমাদুল্লাহ, মিজানুর রহমান আজহারী, আসিফ আদনান সহ আরো অনেকে।
শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও অবরোধের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে পরে তাদের দাবিনামা রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে জমা দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবণে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারীদেরকে “রাজাকারের নাতি-পুতি” বলে সম্বোধন করে। তার ভাষায়,
“মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?” [২১]
প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের প্রতিবাদ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে বের হয় শিক্ষার্থীরা। রব ওঠে,
“তুমি কে? আমি কে?
রাজাকার! রাজাকার!
কে বলেছে? কে বলেছে
স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ৪জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দেয় সরকার বাহাদুর।[২২] রাত ১১.৩০ এর দিকে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে বসে। ১৩ জন আহত হয়।[২৩]
দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদেরকে রাজাকার বলার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররা নিজেদেরকে রাজাকার বলে পরিচয় দেয় স্লোগানে স্লোগানে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর বিপক্ষে ব্যাপক প্রতিবাদ! জানানো হয়। কেউ কেউ শেষ দেখে ছাড়বে বলে হুংকার দিয়ে বসে।
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আহত বিক্ষোভকারীদের ওপরও হামলা চালায়। সেদিন উভয়পক্ষের তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়।[২৪]
আন্দোলন যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী দেখা গেলো। ছাত্রলীগের হামলা চলতেই থাকলো। এদিন দুপক্ষের সংঘর্ষে শহীদ আবু সাইদ ও ওয়াসিমসহ অন্তত ৬ জন মারা যায়।[২৫] । রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এর ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যায়, আনুমানিক ২.৩০ থেকে ৩.০০ এর দিকে।[২৬] ইন্টারনেটে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। হাসিনা সরকার এদিন স্কুল কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। আন্দোলনরত ছাত্ররা পরের দিন মানে ১৭ই জুলাই নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাযা আদায়ের কর্মসূচী ঘোষণা করে।
এইদিন বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে এবং জবাব দেওয়া হবে। একটি ঘটনাও জবাব ছাড়া যাবে না। রাজাকারদের ফাঁদে পড়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল হয়।’
সকালে, বিক্ষোভকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দেয় এবং ক্যাম্পাসগুলোকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ হিসেবে ঘোষণা করে। ছাত্ররা নিহতদের গায়েবানা জানাযা পড়তে চেষ্টা করে, কিন্তু পুলিশ আক্রমণ করে বসে। সন্ধ্যা ৭.৩০ এর দিকে বাংলার কোটির মানুষের ক্ষোভ আর অসন্তুষ্টি নিয়ে শাসনকার্য চালানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধের বিচারকার্য চালানোর জন্য তদন্ত
হাসিনা সরকারের বিপুল পরিমাণ ধরপাকড়-নির্যাতন-হত্যার মধ্য দিয়ে ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করার মধ্য দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবেই বলেই আশংকা হচ্ছিল।
কিন্তু ১৮ জুলাই সব শঙ্কা দূর করে, ঢাকার রাজপথ উত্তাল করে তোলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিল। এদের সাথে যুক্ত হয় আপামর জনসাধারণ।
পরিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচীতে দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ছাত্ররা আন্দোলনে যোগ দেয়। পুলিশ আন্দোলনরতদের ওপর নির্বিচারে বুলেট চালাতে শুরু করে। পুলিশের সাথে ছাত্রলীগেরও শক্তি প্রদর্শন চলছিলো পাল্লা দিয়ে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরতরা বিটিভি ভবনসহ নানা সরকারী স্থাপনায় হামলা করে। সারাদেশে একযোগে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী পলক সাহেবের মতে মহাখালীর ডেটা সেন্টারে উগ্রবাদী! কোটা সংস্কারপন্থী ছাত্রদের লাগিয়ে দেওয়া আগুনে নাকি গোটা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়! মেট্রোরেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের খলনায়ক প্রমাণের জন্য সরকার মহলের পক্ষ থেকে বলা হয় মেট্রোরেল অগ্নিসংযোগের কারণে নাকি ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং তা কবে আবার চালু করা সম্ভব হবে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।[২৭] যেখানে এক মাস সাতদিন বন্ধ থাকার পর ২৫শে অগাস্টেই মেট্রোরেল চালু হয়ে যায়।[২৮] মিথ্যার যদি হাত-পাসমেত শরীর থাকত তবে মনে হয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-নেত্রীর রুপ ধরতে পারে! সারাদেশে প্রায় ১৫০০ এর মত হতাহত হয়। ২৯ জন মারা যায়।[২৯] দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলতেই থাকে। জুমার নামাজের পর সারাদেশে, বিশেষ করে ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষ তীব্র হয়। নরসিংদীর কারাগার, মেট্রোরেল স্টেশন, বিআরটিএ অফিসসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশানুযায়ী নির্বিচারে দেশের আন্দোলনরত মানুষদের ওপর গুলি চালায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নয় দফা দাবী ঘোষণা করে। ঢাকায় ৪৪ জন ও ঢাকার বাহিরে ৫৯ জন নিহত হয়।[৩০] মধ্যরাত থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করে হাসিনা-রেজিম।
কারফিউয়ের প্রথম দিনই অন্ততপক্ষে ২১ জন নিহত হয়।[৩১] পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেয়। ৯৩% সাধারণদের জন্য, ৫% মুক্তিযোদ্ধা-সন্তান, ১% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং ১% শারিরীক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য বরাদ্দ হয়। ছাত্রদের পক্ষ থেকে শাটডাউন আরও জোরদার করার কথা বলা হয়। এদিন কারফিউয়ের মধ্যে সাতজন নিহত হয়। শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে দেখা করে।[৩২]
টানা তিন দিন পুলিশি অভিযানে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক হাজার ৪২৭ জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় ২০ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৫০টি মামলা দায়ের করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বরাবরের মত এতেও বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের দুর্গন্ধ পায়। কোটা সংস্কারের পক্ষে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তবে ৪ জন সমন্বয়ক সেই প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করেন। তারা নিহত ও আহতদের বিচারের দাবী তোলে। সীমিতাকারে ইন্টারনেট চালু হয়। তবে বন্ধ ছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ।
আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রাশেদ—এই তিন সমন্বয়ককে ১৯শে জুলাই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা জানান, অজ্ঞাত কয়েকজন তাদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে বিক্ষোভ শেষ করার ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্যাতন করেছিলো।
জাতীয় পার্টির নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ, ডেভিড হাসানাতসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্র ও শনিবার ৯ ঘণ্টার জন্য কারফিউ উঠিয়ে নেওয়া হয়। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আন্দোলনকারীদের ওপর অভিযান বন্ধের আহ্বান জানায়।
গোয়েন্দা পুলিশ নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার—এই তিনজন সমন্বয়কে তুলে নিয়ে যায়। ধড়পাকড় শুরু হয় পুরোদেশে। ৫৫৫টি মামলা দায়ের হয় এবং ৬২৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।[৩৩]
ঢাকায় অবস্থিত ১৪টি পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিক মিশন এক যৌথ বিবৃতি জারি করে, যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অন্যায় আচরণের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুইজন সমন্বয়ককে গ্রেফতার করে, নিয়ে যায় “নিরাপদ হেফাযতে!”।
ডিবি পুলিশ নুসরাত তাবাসসুম নামের সমন্বয়ককেও গ্রেফতার করে। রাত নয়টার দিকে সবাইকে ডিবি অফিসে একত্রে খেতে দেখা গিয়েছিলো, যা দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ডিবি অফিস থেকে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচী প্রত্যাহারের বিবৃতির মাধ্যমে আন্দোলনকে শেষ করার ঘোষণা দেন। তবে বাইরে থাকা অন্য সংগঠকরা তা না মেনে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। হেফাজতে থাকা ছয়জনকে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ করাকে জাতির সঙ্গে 'মশকরা' বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট। শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নামে।
হতাহতদের শোকে সরকার শোক দিবস ঘোষণা করে। আওয়ামীপন্থীরা শোকের জন্য কালো রঙের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। এর জবাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল রঙের মাধ্যমে সরকারের শোক দিবসের নাটক বর্জন করে। সাধারণ জনগণ তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে লাল রঙকেই গ্রহণ করে নেয়।[৩৪]
সারাদেশে “মার্চ ফর জাস্টিস” নামে বিক্ষোভ কর্মসূচী দেওয়া হয়। সব শিক্ষার্থীদের পুলিশ হেফাজত ও কারাগার থেকে মুক্ত না করলে এইচএসসি পরীক্ষা বর্জন করা হবে বলে ঘোষণা দেন কয়েকশ পরীক্ষার্থী। ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ফেইসবুক, হোয়াটসএ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেওয়া হয়।
সরকার জামাত-শিবিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এদিন ডিবির হেফাজত থেকে ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া হয়।
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের হামলায় আরও দুইজন নিহত হয়। বিক্ষোভকারীরা পরদিন সারা দেশে কর্মসূচি এবং ৪ অগাস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। ফেইসবুক আবার সাত ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সংগঠক জানান, ডিবি অফিস থেকে তাদের দেওয়া “আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা” এর জন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। তারা স্বেচ্ছায় তা দেননি।
ছাত্রদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো মানুষ সমবেত হয়। জনসমুদ্রের মাঝে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের দাবী একটাই—হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। জুলাই ৪-এ তিনি ঘোষণা করেন এক পূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের। এদিনও ৬ জন নিহত ও ৫০ জন আন্দোলনরত আহত হয়। এর আগে হাসিনা বলে, “গণভবণের দরজা খোলা আছে। আমরা কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে বসতে চাই। আমরা সংঘর্ষ চাই না।” কিন্তু দুই প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উভয়েই সরকারের সাথে কোনোপ্রকার আলোচনায় বসতে রাজি হয় না।[৩৫]
দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রচণ্ড সহিংস সংঘর্ষ হয়। দেশব্যাপী বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকসহ অন্তত ৯১ জন নিহত হয়।[৩৬] বিক্ষোভকারীরা সারাদেশে নাগরিকদের “মার্চ টু ঢাকা” করার আহ্বান জানায়। শুরুতে ৬ জুলাইয়ের কথা বলা হলেও তা একদিন আগে ৫ অগাস্ট করার ঘোষণা আসে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ মানুষ ঢাকামুখো হয়। হাসিনা সরকার মরণকামড় দিতে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরতদের ওপর হামলে পড়ে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়। শাসনকার্য থেকে পদত্যাগ করে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফ্যাসিবাদী সরকারপ্রধান গণতন্ত্রের মানসকন্যা! শেখ হাসিনা সামরিক বিমানে করে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ থেকে পলায়ন করে, পাশের দেশ ভারতে। জনগণ গণভবণের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেখানে চলে লুটপাট। দীর্ঘ ১৬টি বছর ফ্যাসিবাদের কালো সাম্রাজ্যের অন্ধকার সরে যাওয়ার এই আনন্দঘন মূহুর্তে সাধারণ জনগণ আনন্দে আটখান হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। আওয়ামী লীগের প্রতীকধর্মী একাধিক স্থাপনা ও মূর্তিতে জনগণ ভাঙচুর করে।
এভাবেই বাংলাদেশের মানুষ সাক্ষী হয় ইতিহাসের এক অনন্য ঘটনার, এক অশ্রুতপূর্ব দোর্দণ্ড ক্ষমতাশালীর চিত্তস্বস্তিকারী পতনের। যেই ফ্যাসিবাদী যালিম শাসকের পতনকে অল্প সময় আগেও মনে হচ্ছিলো “আরও অনেক সময়ের ব্যাপার”সেই সরকারেরই পতন হলো অনেকটা নাটকীয়তার মাধ্যমে। রাজনীতির পটভূমিতে এই টুইস্ট বা মোচড়খানা সুলিখিত কোনো থ্রিলার গল্পের চাইতে বেশি রোমাঞ্চকর। এই নাটকীয়তা আসলে ফ্যাসিবাদী সরকারের কাঠামোগত অন্যায়-অবিচার, গণতন্ত্রের তল্পিবাহী হয়েও ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড পরিচালনা, বিরোধী কণ্ঠকে যেকোনো মূল্যে দমন করা, দেশের আলিমসমাজকে বছরের পর বছর নিপীড়নের রোলার কোস্টারে পিষ্ট করা, সরকার-বাহাদুরের নিদারুণ নির্লজ্জতার সাথে মিথ্যা বলা, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নিজ দলের ন্যারেটিভ বমন করার মাধ্যম বানানো, ইতিহাস পরিবর্তন, দৈনন্দিন জিনিসপাতির মূল্যবৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে যুলমের বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জীভূত আক্রোশের বিস্ফোরণ। জনরোষের সেই বিস্ফোরণের সামনে যালিমের হর্ম্য টিকে থাকতে পারে না, পারেওনি—যেমনটা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। বাংলাদেশের যুলমপীড়িত এই ক্লিষ্ট, ক্লান্ত-শ্রান্ত জনগণ ১৬টি বছর পরে যেয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পায়। ফ্যাসিবাদমুক্ত আকাশে শ্বাস নিতে পারে।
তবে কোনো স্বাধীনতা-ই রক্তপাত, প্রিয়জনের বিয়োগব্যাথা, মায়ের আহাজারি আর অশ্রু ছাড়া আসেনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে, বাংলার মানুষকে এই নাটকীয় পটপরিবর্তনের সাক্ষী বানাতে ঝরে যায় আবু সাঈদ, মুগ্ধের মত হাজার হাজার প্রাণ। আহত হয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ। তাদের ত্যাগ ভোলার মত নয়। যাদের রক্তস্রোত যুলমের কালিমা আর পঙ্কিলতাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে। এই নতুন বাংলাদেশের চকচকে আস্তরণের নিচে তাদের রক্তের দাগ এখনও লেগে আছে। এই নব বাংলাদেশ তাদের রক্তের দান।
[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Human_rights_in_Bangladesh, https://en.wikipedia.org/wiki/Extrajudicial_killings_and_enforced_disappearances_in_Bangladesh, https://en.wikipedia.org/wiki/Human_rights_in_Bangladesh
[২] https://en.prothomalo.com/business/local/yur9qsg81m, https://www.theguardian.com/business/2025/jul/19/bangladeshis-linked-to-hasina-regime-appear-to-have-made-uk-property-transactions-in-past-year, https://www.thedailystar.net/business/news/awami-league-rule-20b-loan-money-laundered-3904696
[৩] https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Rifles_revolt, https://www.hrw.org/report/2012/07/04/fear-never-leaves-me/torture-custodial-deaths-and-unfair-trials-after-2009-mutiny
[৪] https://en.wikipedia.org/wiki/2013_Shapla_Square_protests, https://odhikar.org/people-who-were-killed-in-may-05-06-2013-centering-hefazate-islam-rally/, https://www.dhakatribune.com/bangladesh/380404/hefazat-publishes-list-of-93-allegedly-killed-at
[৫] https://www.jugantor.com/national/961606
[৬] https://en.prothomalo.com/bangladesh/b3joe8ixr8
[৭] https://www.researchgate.net/figure/Summary-of-the-amendments-of-quota-system-since-introduction-BPSC-website_tbl1_316548502
[৮] http://newagebd.net/detail.php?date=2013-07-12&nid=56720
[৯] https://www.bibortonpoth.com/14809 #কোটা_সংস্কার_বিরোধী_অবস্থান
[১০] https://www.prothomalo.com/bangladesh কোটা-সংস্কার-নিয়ে-এখন-হা-হুতাশ-কেন-প্রধানমন্ত্রী
[১১] https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/খুঁজে-খুঁজে-মারল-ছাত্রলীগ
[১২] https://rhd.portal.gov.bd/sites/default/files/files/rhd.portal.gov.bd/notices/f237e728_1aed_426b_9b95_892fa2e8114e/Notice_Kota_22_11_18.pdf
[১৩] https://www.jugantor.com/national/205810
[১৪] https://www.aljazeera.com/news/2024/7/16/whats-behind-bangladeshs-violent-quota-protests
[১৫] hhttps://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%80_%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0_%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8
[১৬] https://www.bssnews.net/bangla/july-uprising/216941
[১৭] https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/quota-protest/news-606171
[১৮] https://www.bssnews.net/news/234531
[১৯] https://ilke.org.tr/files/netstk/50/web/115/5092/dosyalar/Final_ANR_Bangladeshs%20July%20Revolution.pdf, পৃঃ ৭
[২০] https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/july-11-2024-blockade-turns-confrontational-3936896
[২১] https://www.ittefaq.com.bd/693673/মুক্তিযোদ্ধাদের-নাতিপুতিরা-পাবে-না-তাহলে-কী
[২২] https://www.prothomalo.com/bangladesh/4j8h7x1mak
[২৩] https://www.prothomalo.com/bangladesh/imsquld8tc
[২৪] https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/timeline-student-protests-3668996
[২৫] ঐ + https://www.bssnews.net/bangla/stories-of-mass-upsurge/150845
[২৬] https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/student-rangpur-killed-during-clash-between-police-and-protesters-3658216
[২৭] https://www.dhakatribune.com/bangladesh/dhaka/352689/metro-rail-faces-tk500c-damage-as-no-clear
[২৮] https://www.ittefaq.com.bd/ মেট্রোরেল-চালু-হয়েছে
[২৯] ১৭ ও ১৮নং সুত্র দেখুন।
[৩০] ১৮নং সূত্র দেখুন।
[৩১] ২৪নং সূত্র দেখুন।
[৩২] ১৭নং সূত্র দেখুন।
[৩৩] ১৮নং সূত্র দেখুন।
[৩৪] https://www.jagonews24.com/en/national/news/75805
[৩৫] https://www.bbc.com/bengali/live/cgrlrjlj9drt#asset:2d5e6283-ba9d-4c26-b7e1-118dc3956d52, https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/quota-protest/news-602226
[৩৬] https://edition.cnn.com/2024/08/04/asia/bangladesh-clashes-police-protesters-activists-intl/index.html